মাদানী ফিকাহর প্রভাবে মাক্কী যুগের বিপর্যয়

শিরোনাম দেখে কেউ কেউ আঁতকে উঠতে পারেন, কিন্তু শিরোনামের পিছনে যে করুন বাস্তবতা আছে তা যদি কিছুটা উপলব্ধি করতে পারি তাহলে আঁতকে উঠার পরিবর্তে আফসোস হবে। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন অবসানের পর ব্রিটিশ ও জমিদারি শাসনামলে মুসলিমদের চরম দুর্দিন নেমে আসে। চরম দারিদ্রতা অশিক্ষা কুশিক্ষা বেকারত্ব তাদেরকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করে। ফলে বেঁচে থাকার নুন্যতম তাগিদে তারা ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচারের বিপরীত চলতে বাধ্য হয়।

মুসলিম শাসনামলে মুসলিমরা শিক্ষা দীক্ষা রুচিবোধ এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী থাকার কারণে পৌত্তলিক ধর্মীয় কৃষ্টি কালচার মুসলিম সমাজকে প্রভাবিত করতে পারেনি। কিন্তু ব্রিটিশ ও হিন্দু জমিদারদের বদৌলতে গণ্ডমূর্খ এবং ভিখারিতে পরিণত হ‌ওয়ার পর নেংটি পরিহত মুসলিমরা দলে দলে অমুসলিমদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে থাকে। তাদের বারো মাসে তেরো পর্ব, প্রতিটি পর্বে বাদ্য বাজানা খানাপিনা ‘প্রসাদ ও ভোগ’  এর ছড়াছড়ি।  মুসলিমদের দুই ঈদ ব্যতিত আর কোনো উৎসব নেই, ইসলামী কৃষ্টি কালচার অভাবের তাড়নায় ভুলেই গেছে, তাই অমুসলিমদের পূজা পার্বণের প্রসাদ, দেবতার উচ্ছিষ্ট ভোগ, শ্রাদ্ধ ও পিন্ডি দানের ভোজ খেয়ে পেট ভরতো আর ভালোও লাগতো।

ব্রিটিশ ভারতের নির্যাতিত নিষ্পেষিত মুসলিম নেতৃবৃন্দ এই পতন মুখো মুসলিম জাতিকে গণ্ডমূর্খ ও ভিক্ষুক হবার হাত থেকে রক্ষা ও নিজস্ব তাহজিব তামাদ্দুন ফিরে পাওয়ার আসন্ন লড়াইয়ের মুসলিম জাতিকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর কৌশলে অবলম্বন করে দুই ঈদের উৎসব ছাড়াও বেশ কিছু উৎসবের আয়োজন করে। এ সব উৎসব বা অনুষ্ঠানের  পিছনে অনেক করুন ইতিহাস নিহিত রয়েছে। সে সকল  অনুষ্ঠানের নাম যেমন —

১। মহরম মাসে জারি গান ও লাঠি খেলা– ব্রিটিশ ভারতে নেওয়া সহজ ছিল না বিশেষ করে সিপাহী বিপ্লবের পর ব্রিটিশদের নজরদারি এমনভাবে বেড়ে যায় যে মুসলিমদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ  বা কোথাও একত্র হতে পারত না।  ফলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ কৌশল অবলম্বন করে মহরম মাসে কারবালার শোকাবহ ঘটনা উপলক্ষ্য করে মাসব্যাপী জারিগানের‌ অসিলায়, যুদ্ধের নাকাড়া বা বাজনার তালে তালে লাঠি, তরবারি, ঢাল, সুরকি, বল্লম খেলার মাধ্যমে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।

২ ।  কলেমাপড়া,চল্লিশা বা ফতেয়া জিয়াফত– মৃত্যু হিন্দুর আত্মাকে মুক্তি বা স্বর্গারোহনের জন্য ধর্মীয়ভাবে শ্রাদ্ধ ও পিন্ডি দানের আয়োজন করা হয়। এ সব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পদের খাবারের আয়োজন করা হতো ,অভাবে তাড়নায় দরিদ্র মুসলিমরা নেংটি পরিহিত হয়ে দলে দলে হিন্দুর শ্রাদ্ধ ও পিন্ডি দানের ভোজ খেতে যেত। অভাবী ও ক্ষুধার্ত লোকগুলোকে ধর্মীয় নিষেধের কথা বলে থামানো যেত না।  এরূপ কর্ম থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষা করার জন্য অবস্থা সম্পূর্ণ মৃত মুসলিম ব্যক্তির বাড়িতেও বড় ধরনের খাবারের মজলিস  চালু করা হয়। গরু ছাগল জবাই করে খাবারের আয়োজন শুরু করে ফলে মুসলিমদের হিন্দুদের অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

৩ । মহরম (আশুরা), রবিউল আউয়াল ও রজব মাসে সিন্নি–এই তিন মাসের বিশেষ দিনগুলোতে সমাজের কর্তারা বাড়ি বাড়ি চাল ডাল টাকা পয়সা উঠিয়ে মসজিদ বা মক্তবের খোলা মাঠে সিন্নির আয়োজন করত। ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে দোয়া ,জিকির ও আলোচনা হতো, পরিশেষে ধনী গরিব নির্বিশেষে খাবার বিতরণ করা হতো। এভাবেই মুসলিম সমাজে উৎসব বা অনুষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়,এজন্য যে মুসলিম সন্তানরা যেন অন্য ধর্মের উৎসব অংশগ্রহন না করে।

 ৪। মিলাদ মাহফিল–এ উপমহাদেশে অমুসলিম সম্প্রদায়ের ১২ মাসের ১৩ পর্ব ছাড়াও বিবাহ শাদীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাদ্য বাজনা খানাপিনার উৎসব লেগেই থাকতো।  মুসলিম সমাজের বাচ্চা কিশোর যুবক বৃদ্ধরাও ঐ সকল অনুষ্ঠানে আকর্ষণ অনুভব করত। পৌত্তলিক অনুষ্ঠানের আকর্ষণ থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষা করার জন্য পাড়া মহল্লার বাড়িতে বাড়িতে রাসূলুল্লাহ সঃ এর জন্ম বৃত্তান্ত সম্বলিত বিভিন্ন ধরনের নাতে-রাসুল সুর করে গাওয়া শুরু হয়, অনুষ্ঠান শেষে দোয়া মোনাজাত শেষে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন বিতরণ করা হতো, যাকে আমরা মিলাদ বলি। ফলে মুসলিম শিশু কিশোর যুবক বৃদ্ধরা পৌত্তলিকদের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান থেকে দূরে সরে আসে। 

৬। শবে বরাত পালন– শাবান মাসে প্রতিটি মুসলিম ঘরে ঘরে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের পর হালুয়া রুটি বিতরণ করা হতো, ধনী গরিব নির্বিশেষে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো আর ১৪ তারিখ  সারা রাতব্যাপী ইবাদত বন্দেগী করা হতো। এ রাত্রে নফল নামাজ, দান- খয়রাত করলে কবুল হবে এবং নিজেদের ভাগ্য ভালো হবে ভেবে মুসলিমরা দান খয়রাত ও বিভিন্ন পদের খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করত, আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দাওয়াত করে খাওয়াতো। সেকালের মুসলিম সমাজে শবে বরাত অনুষ্ঠান একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল।
৭। বিয়ে-শাদীতে মেয়ের পিতার বাড়িতে ভোজের আয়োজন– মেয়ের বিবাহের দিন মেয়ের পিতার বাড়িতে বর যাত্রীর জন্য খাবারের আয়োজন করা ইসলামের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। ওলিমা অর্থাৎ বিবাহত্তর বরকে খাবারের আয়োজন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কণের বিবাহে কণের পিত্রালয়  বর যাত্রীরা এক দুই দিন ধরে অবস্থান করত ও খাবারের আয়োজন চলতো। বরযাত্রী এসে মুসলিম কণেকে নিয়ে গেলে কণে বাড়ি ফাঁকা হয়ে যেত, কনে বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসতো, অন্যদিকে আবার অমুসলিমদের ঠাট্টা তামাশা চলত। এসব কিছু বিবেচনায় মুসলিম নেতৃবৃন্দ মেয়ের বিবাহ উপলক্ষে মেয়ের পিতার বাড়িতেও বরকনে উভয়পক্ষের লোকদের নিয়ে খাবারের আয়োজন শুরু করে। এই অনুষ্ঠানটি আজও মুসলিম সমাজে চালু আছে।

ইসলামের ইতিহাসে কিংবা বিভিন্ন ইসলামিক খেলাফতের যুগে মুসলিম উম্মাহর মাঝে উল্লিখিত অনুষ্ঠানগুলোর প্রচলন দেখা যায় না। রাসুল সঃ কিংবা সাহাবায়ে কেরামের আমলেও এ সব অনুষ্ঠান ছিল না। এ সব উৎসব বা অনুষ্ঠান নতুন কোন এবাদত ছিল না, এবাদতের অংশ‌ও ছিল না, শুধু  ইসলামী সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচারের অংশ ছিল মাত্র। সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচার জাতি গঠনের মৌলিক উপাদান। সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচারের উৎকর্ষ সাধন ছাড়া কোন জাতি টিকে থাকতে পারে না। কোন জাতিকে ধ্বংস করার জন্য সে জাতির সকল নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বনিতাকে হত্যা করার প্রয়োজন নেই। সেই জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টি কালচার পরিবর্তন করে দিলেই সে জাতি আপনা আপনি ধ্বংস হয়ে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কৃষ্টি কালচার থেকে মুসলিমদেরকে রক্ষা করার অন্যতম কৌশল হিসেবে মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরে আলাদা ইসলামী পরিবেশ ও কৃষ্টি কালচার গড়ে তোলার জন্য-উপরে উল্লেখিত উৎসবের আয়োজন  করা হয়। যাতে মুসলিমরা অমুসলিম সম্প্রদায়ের জাঁকজমকপূর্ণ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় উৎসব থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

মুসলিম শাসনামাল পর্যন্ত এ সকল অনুষ্ঠানের কোন প্রয়োজন ছিল না, কারণ তখন ইসলামী প্রশাসন বা সরকার সমূহ সমাজের মধ্যে ইসলামী  কৃষ্টি কালচার বিকশিত করার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও নির্দেশ প্রদান করা হতো। অন্যদিকে মুসলিম শাসনামলে অমুসলিমদের কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কোন মুসলিমের যোগদান করাকে মুনাফিকি,ফাসেকি ও কবিরা গুনাহ মনে করা হতো। কারণ তখন মুসলিম সমাজ স্বাবলম্বী ছিল , নিজেদের আত্মমর্যাদা ও ধর্মীয় অনুভূতি বজায় রাখার স্বার্থে  অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখত।

ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে শুরু করে রাসূল সা: সরাসরি ইসলামবিরোধী নয় এমন স্থানীয় রীতিনীতি, আচার-আচরণকে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরব আচার প্রথাকে মেনে নিয়েছিলেন। ইবনে তাইমিয়ার একটি বিখ্যাত ফতোয়া আছে, যেকোনো দেশের স্থানীয় কাস্টমস (রীতিপ্রথা) যদি সরাসরি ইসলামবিরোধী না হয়, একেবারে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ না হয়, তাহলে সেটি থাকবে। আমরা এ ব্যাপারে অনেক সময় কিছুটা হঠকারিতা করে বসি; কিছুটা বাড়াবাড়ি করে বসি। এগুলো থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। ইসলামের যে মহত্ত্ব, সামগ্রিকতা, ব্যাপকতা এবং বহু মত ও পথের সুযোগ আছে, সে বিষয়টি মনে রাখতে হবে। সবচেয়ে বড়কথা হলো মুসলিমদের করুন ইতিহাস না জানার কারনে তথাকথিত কিছু ওলামায়ে কেরাম এ সব অনুষ্ঠানকে এবাদতের নতুন সংযোজন মনে করে বেদা’ত ঘোষণা করে ব্যাপক প্রচার প্রচলনা চালানো হয়। ফলে এ সব অনুষ্ঠানের বেশ কিছু বন্ধ হয়ে গেছে, দু-একটা অল্প পরিসরে চালু আছে। ব্যাক্তিগতভাবে অনেকের অনেক কিছু পছন্দ হয় না, তাইবলে সেটিকে সরাতে হবে, ধৈর্য ধরে সরাতে হবে। যেটি রাখলে চলে, সেটি রাখতে হবে। কারণ সরালে খালি থাকরেনা,মন্দ কিছু দিয়ে ভরে যেতে পারে।

এ সকল দিক বিবেচনা করে জমিদারি শাসনামলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলিমদের ঈমান এবং ইসলামী সমাজ রক্ষার স্বার্থে উল্লেখিত অনুষ্ঠানগুলো ইসলামিক কায়দায় পালনের প্রচলন শুরু করে। এতে ভুখা নাঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের ভালো-মন্দ একটু খাবারের ব্যবস্থা হতো, আল্লাহর রাসূলের কিছু বাণী শুনত, ইসলামী পরিবেশেও উৎসব উৎসব ভাব অনুভব হত। এসব কিছুতে মৌলিকভাবে ঈমান আকিদাহ কিংবা ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান তেমন লঙ্ঘিত হতো না। ইসলামী সমাজ রক্ষার্থে মন্দের ভালো হিসেবে আমাদের দেশে এসব অনুষ্ঠান শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছিল। ইসলামী শাসন ও  সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না থাকার কারণেই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার উপকরন হিসেবে এ সব অনুষ্ঠান পালন করা হতো।  ইসলামী প্রশাসন ও সমাজ প্রতিষ্ঠিত থাকলে ইসলামী নামে এসব অনুষ্ঠানের পালনের কোন প্রয়োজন হতো না। এখন সমস্যা হলো  এদেশে ইসলামী প্রশাসন এবং ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হওয়ার আগেই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের অন্যতম উপকরণ এ সকল অনুষ্ঠানকে বেদাত ও নাজায়েজ ঘোষণা করে ফেলা হলো।

শহর বন্দর পল্লী গ্রামেও এখন আর মিলাদ মাহফিলের হাক শোনা যায় না, মহরম মাসে জারি গানের আসরে লাঠিখেলা, তরবারি ও লাঠি খেলা দেখা যায় না, কোটি কোটি মুসলিম আছে কিন্তু সুশৃঙ্খল, প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সাধারন মুসলিম একজনও নেই। শবে বরাতের সময় হালুয়া রুটি খাওয়ার আমেজ আসে না, বিপদ-আপদে কোরআন খতম, দোয়া ইউনুস পাঠের জন্য মুসলিমগণ সমবেত হয় না। ফতেয়া বা চল্লিশার দাওয়াতে হাজার হাজার লোকের সমাগম হয় না। জুমার দিনে মসজিদে মসজিদে সিন্নী আসেনা। রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ এবং ইসলামী কৃষ্টি কালচারের বিরূপ প্রচারনার কারণে সাধারণ মানুষের মন থেকে ইসলামী ভাবধারা কিংবা ইসলামী পরিবেশ আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। ইসলামী সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচার ও অনুষ্ঠানের স্থানে –মঙ্গল শোভাযাত্রা, থার্টি ফাস্ট নাইট,ভালোবাসা দিবস, বিবাহ বার্ষিকী, বিয়ে-শাদীতে নাচ-গান,  সাধ খাওয়ার অনুষ্ঠান, নবজাতকের চুল কাটার অনুষ্ঠান, মুখে ভাত দেওয়া বা অন্ন প্রসন এমন আরো অনেক অমুসলিমদের অনুষ্ঠান মুসলিম সমাজে পালন করা হচ্ছে। এদেশের মুসলিমরা ধনী-গরীব শিক্ষিত মূর্খ নির্বিশেষে এ সকল অনুষ্ঠান পালন করছে। এমনও দেখা যায় বাড়িরকর্তা নামাজী, হাজী কিন্তু তার পরিবারে সদস্যরা ঐ সব পৌত্তলিক সংস্কৃতি পালন করছে।

 আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই চল্লিশা, ফতেয়া, মিলাদ, কুরআন খতম, দোয়া ইউনুস খতম, শবে বরাত, মহরম রবিউল আউয়াল ও শাবান মাসের সিন্নি, জুমা বারে মসজিদে সিন্নিসহ সমাজে প্রচলিত ইসলামী কৃষ্টিকালচার বা উৎসব অনুষ্ঠানেকে নাজায়েজ ও বিদাত ঘোষণা করা না হলে মুসলিম পরিবারগুলো সারা বছর এ সব উৎসব বা অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকত, নিজেদের সংস্কৃতি ও উৎসবগুলোকে তারা অনেক বড় মনে করার কারণে ব্রাহ্মণ্য পৌত্তলিক সংস্কৃতির দিকে আকর্ষণ অনুভব করতো না, ফলে অপসংস্কৃতি মুসলিম সমাজে অত সহজে ঢুকতে পারত না। আজ থেকে মাত্র ৩০ বছর আগেও এ দেশের মুসলিমরা তাদের সুখে-দুখে, ভালো-মন্দে, বিপদ আপদে, ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উদ্বোধন উপলক্ষে মিলাদের আয়োজন করে সকলের কাছে দোয়া চাইতো। এখন কারো দোয়া কারো কাজে লাগে না তাই সুখে দুঃখে ভালো-মন্দে কোন কিছুতেই আর দোয়ার অনুষ্ঠান করা হয় না। মুসলিম সমাজের মধ্যে যেটুকু ইসলামী কালচার ছিল তা পুরাপুরি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একদিকে ওলামায়ে কেরাম ঐ সকল অনুষ্ঠানকে বেদাত ও নাজায়েজ বলে ফতোয়া দিচ্ছেন ফলে ইসলামী সমাজ নির্মাণের এ  উপকরণগুলো মুসলিমদের মন থেকে আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে পৌত্তলিক সংস্কৃতি মুসলিম সমাজের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। মুসলিম সমাজে প্রচলিত ইসলামী উৎসব ও কৃষ্টি-কালচার গুলোকে যারা নাজায়েজ ও বিদআত ফতোয়া দিয়েছেন তারাও নতুন করে ইসলামী উৎসব বা কৃষ্টি কালচারের প্রচলন সৃষ্টি করতে পারেননি। ইসলামী তাহজিব তামাদ্দুন ব্যাঙের লেজের মতো ক্ষয় হতে হতে টিকায় এসে শেষ হতে চললো, এ কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে এদেশে তথাকথিত অইসলামী কৃষ্টি-কালচারের অবসান ঘটিয়ে ইসলামী কৃষ্টি কালচারের প্রচলন ঘটানো যায় এ বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা নাহলে অতি দ্রুত এদেশের মুসলিম জাতিসত্তার কোন চিহ্নই অবশিষ্ট থাকবে না।

এই প্রকাশনাটি শেয়ার করুন:

Picture of ইবনে শাহ

ইবনে শাহ

ইসলামী চিন্তাবিদ

সম্পর্কিত প্রকাশনাসমূহ

দেশপ্রেমের হাকিকত!!!

দেশ প্রেম নিয়ে আমাদের দেশে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে চলছে। সেই ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে অদ্যবধি পর্যন্ত এদেশের রাজনৈতিক ময়দান গরম করা, দৃষ্টি আকর্ষণ

আরও পড়ুন »

তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?

হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহমাতুল্লাহ আলাইহির মৃত্যুর পরেরদিন থেকে দেশের এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া জগতে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি এবং খবর খুবই ভাইরাল হয়েছে

আরও পড়ুন »

ঈমানী নিশান

সর্বাধিক প্রাক্তন মধ্যে. গ্র্যাভিডা ফ্রিঙ্গিলা লেকটাসে, ভেল কনভালিস ডলোর ট্রিস্টিক নন। খুব ভালো লাগে। ফুসস কনগেইস্ট বা কনগে গ্র্যাভিডা। আলিকুম ইরাত ভলুটপাট। মৌরিস দাপিবাস অ্যালিকুয়েট আগে নেক সাগিটিস। সর্বাধিক

আরও পড়ুন »

অরণ্যে রোদন

আদর্শিক যাত্রার শুরুতেই শিখেছি মূলধন সিন্দুকে আবদ্ধ করে রাখলে কোন লাভ নেই, মূলধন বাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার মাঝেই সার্থকতা। কিন্তু আদর্শিক পথ চলার তিন যুগ পেরিয়ে আজ কেন

আরও পড়ুন »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইবনে ই শাহ ব্লগগুলি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য তথ্যের একটি অত্যাবশ্যক উৎস হয়ে উঠেছে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং আরও অনেক কিছুর রিয়েল-টাইম আপডেট প্রদান করে।