শ্যাম রাখি না — কুল রাখি

ক্ষ্যাতির বিড়ম্বনায় শ্যাম রাখি না কূল রাখি এই যখন অবস্থা হয়ে যায়, তখন আর অন্যদিকে দৃষ্টি দেওয়ার অবকাশ থাকে না। মাথার মধ্যে সারাক্ষণ ঘুরপাক খেতে থাকে শ্যামলা না কুল, কুল না শ্যাম। “পাছে লোকে কিছু বলে”– এই চিন্তা এমনভাবে পেয়ে যায় যে স্বাভাবিক কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চললেও অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো, অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো আস্তে আস্তে ঢাকা পড়ে যায়। মনে করে দিলে, কিংবা কেউ দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ক্ষণিকের জন্য বলি — হ্যাঁ এটা আমাদের মনে আছে, পরিকল্পনা নিয়েছি, বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাব ইনশাল্লাহ। তারপরের অবস্থা আগের মতই। যা বারটা -তা এক ডজন।

মিছিল মিটিং নির্বাচন। সকল কর্মসূচি এই তিনটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। এভাবেই কারো ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি, কারো  গলার কাঁটা,  কারো ক্ষেত্রে আবার কাবাবের হাড্ডি হয়ে গেলাম। গলার কাঁটা, কাবাবের হাড্ডির করার কি বা আছে– গতানুগতিক ধারায় দাওয়াত, প্রশিক্ষণ, নামকাওয়াস্তে সমাজ সংস্কার ও সমাজ কল্যাণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যস্ত থাকতে হয় ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি হয়ে। দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটির দিকে চিন্তা থাকলেও বাস্তব পদক্ষেপ সেই আগেরটায় রয়ে গেল। মাঠে ময়দানে কিছুই যে হচ্ছে না– তা নয়, কিছু কাজ অবশ্যই হচ্ছে, এটা অস্বীকার করলে ভুল হবে।  কিন্তু প্রতিপক্ষ রকেটের গতিতে সাঁজোয়া যান নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে, আর আমরা রিক্সায় প্যাডেল মেরে মেরে নিড়ানী হাতে যাচ্ছি আগাছায় অচ্ছন্ন সমাজকে পরিস্কার করতে।

আমাদের সমাজে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মানুষ ধর্মভীরু। নিয়মিত কিংবা অনিয়মিতভাবে তারা কলেমা নামাজ রোজা হজ যাকাত আদায় করে, কেউ  এসবের বিরোধিতা করে এমন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, এমনকি নাস্তিকরাও  প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার সাহস পায় না।  হালাল হারাম ন্যায় অন্যায় মেনে না চললেও মেনে চলা উচিত মনে করে। মদ জুয়া বেপর্দা জেনা ব্যভিচার চাঁদাবাজি ঘুষ দুর্নীতিকে বৈধ বা হালাল মনে করে না, গর্হিত কাজ মনে করেই কেউ প্রকাশ্যে কেউবা গোপনে করছে। আবার মসজিদে যায়, রমজান মাসে ইফতারের আয়োজন করে, মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানায় দান খয়রাত করে, দলমত নির্বিশেষে এসব কাজে বিরোধিতা কেউ করে না  বরং এ সবকে অনেক সাওয়াবের কাজ মনে করে। কোরআন হাদিস নিয়মিত না পড়লেও ইসলামকে ভালোবাসে।   কোরআন শরীফ সুন্দর করে কাপড়ে মোড়াই , ধর্মীয় কিতাব মনে করে আরবি বই নেই এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। বিপদে-আপদে শুভ কাজে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকল কারখানা কিংবা নতুন বাড়ি নির্মাণে মিলাদের আয়োজন করি। এমনকি সিনেমা হল উদ্বোধন করলেও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ইসলামের পরাজয় শুনলে মন খারাপ করে, মসজিদ মাদ্রাসায় হামলা হয়েছে শুনলে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে  রাস্তায় নেমে পড়ে। কুরআন হাদিসের কিতাবকে কেউ অবমাননা করেছে শুনলে রক্ত গরম হয়ে ওঠে।

ঠিক এরকম সাধারণ জনগোষ্ঠীকে কিভাবে বলতে পারেন ইসলাম প্রিয় নয়? এ সব সাধারণ মানুষের মাঝেই আমরা তিন দফা কর্মসূচি নিয়ে হাজির হচ্ছি। অথচ এই বিষয়গুলো তারা ভালোভাবেই অবগত,কেউ বেশি কেউ বা অল্পস্বল্প জানে কিন্তু এমন কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা আমাদের তিন দফার কাজ সম্পর্কে কোন কিছুই জানে না, কিংবা জীবনে কোন দিন শুনেনি। তারা কম জানলেও কম শুনলেও সঠিকভাবে পালন করতে না পারলেও এই বিষয়গুলোকে কেউই অস্বীকার করে না। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে কারো মতবিরোধ হয় না। আমরাও আমাদের দফা ভিত্তিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি সাধারণ জনগণের ক্ষুদ্র একটা অংশ মেনে নিচ্ছে, আমাদের সাথে যোগ দিচ্ছে ও সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে। আমরাও যে কোন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার প্রেরণা পাচ্ছি এবং টিকে আছি।

কিন্তু ইসলাম প্রিয় এই সাধারণ মুসলিমের ৮০ভাগ মানুষ আমাদের সিলেবাসের ইসলামী কেতাবকে জঙ্গি বই মনে করে। তাফহিমুল কুরআনসহ হাদিস ফেকাহ ও দ্বীন ইসলামের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে লিখিত অতি মূল্যবান ব‌ইগুলোকে জঙ্গিব‌ই মনে করে বস্তা ভর্তি করে থানায় নিয়ে যায়। কেউ নিয়ে যাচ্ছে, কেউ সহযোগিতা করছে, কেউবা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সকলের ধারনা এসব জঙ্গি বই। এসব বই পড়লে মানুষ জঙ্গি হয়ে যাবে, সমাজে বিশৃঙ্খলা করবে, বোমাবাজি করে মানুষ হত্যা করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদে সজ্জিত হয়ে দাড়ি টুপিতে আতর লাগিয়ে মসজিদে যাবে, নামাজ আদায় করে, রোজা না  থাকলেও ধুমধাম করে ইফতারের আয়োজন করে। সময় সুযোগ পেলেই হজ করতে যায়, নামের আগে আলহাজ্ব লাগাতে তৃপ্তিবোধ করে। এ সকল কাজে কোন বাধা নেই, কেউ বাধা দিলে কিংবা বিরূপ সমালোচনা করলে মাথা গরম হয়ে যায়। জীবন দিয়ে দেবে তবুও নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, কুরআন, হাদিস, মসজিদ ও মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কোন বাজেকথা বলতে দেবে না। কিন্তু দুঃখ হয় এই লোকগুলি ইসলামী রাষ্ট্র কিংবা একামতে দ্বীনের কথা শুনলেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলে লাফ দিয়ে ওঠে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বলে প্রচন্ডভাবে ক্ষেপেভাবে যায়। ইকামতের দ্বীন তথা ইসলামী রাষ্ট্রের কথা বলাকে সহ্য করতে চায় না। ইকামতের দ্বীন বা ইসলামী রাষ্ট্র  কায়েমের কাজকে ইসলামী কাজ মনে করে না, তথাকথিত রাজনীতি মনে করে। দ্বীন ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন ইসলামী অর্থনীতি, সমাজনীতি, পারিবারিক জীবন, ঈমান, ইসলাম, ইসলামী সংগঠন কিংবা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন ইসলামিক স্কলারের লিখিত ব‌ইগুলোকে জঙ্গি বই মনে করে। এমনকি এসব বই যারা পড়ে, কাছে রাখে এবং এ কাজ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে  তাদেরকে  আলাদা চোখে দেখা হয়। তাদের ধারণা কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা করে এ সকল বই লেখা হয়েছে আর  ধর্মের দোহাই দিয়ে এরা গদী দখল করতে চায়। অথচ আমাদের নবীকে ক্ষমতা দিতে চাওয়া হয়েছে, ধনদৌলত দিতে চাওয়া হয়েছে তিনি গ্রহণ করেননি, ক্ষুদার জ্বালায় পেটে পাথর বেঁধেছেন, উম্মতের জন্য কত কষ্ট করেছেন। আর এরা ইসলামের কথা বলে, নবীর নাম করে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি  করে।

আবার দেখা যায় নিয়মিত হোক বা অনিয়মিত হোক ইসলাম ধর্ম পালনকারী এই ব্যক্তিগুলো অবলীলাক্রমে পৌত্তলিক সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচারকে মেনে নিচ্ছে। পৌত্তলিক সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-কালচারকে অনুসরণ করেও মুসলমানিত্ব বজায় রাখা যায় এটা তাদের বদ্ধমূল ধারণা। ইসলামী সাহিত্য সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচার তথা ইসলামী তাহজিব তামাদ্দুন ছাড়া দ্বীন ইসলাম পূর্ণাঙ্গ হয় না, ইমান পরিপূর্ণ হয় না,  এ বিষয়ে সাধারণ জনগণের কোন জ্ঞান নেই, সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। তারা মনে করে নামাজ রোজার  সাথে সামাজিক রীতিনীতি, কৃষ্টি কালচারের কোন সম্পর্ক নেই, ইসলাম হলো মনের বিষয় নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত হলো নিজস্ব পালনীয় বিষয়। এসব বিষয়কে সমাজের রীতিনীতি কৃষ্টি কালচারের মধ্যে টেনে এনে কি লাভ? জীবনটাকে নিরামিষ করে তোলা ছাড়া আর কি?

দ্বীন ইসলাম তথা ইসলামী শরীয়তের বিধানে কলেমা নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত যেমন ফরজ ঠিক তেমনি ভাবে ইসলামী সংস্কৃতি কৃষ্টিকালচার ও ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাকেও ফরজ করা হয়েছে। ইসলামী সংস্কৃতি ও ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যান্য সকল ফরজের মতই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ, এ বিষয়ে আমাদের দেশের ওই ৯০% ইসলাম প্রিয় মানুষ একমত নয়। তাঁরা আরো বলে নামাজ রোজার জায়গায় নামাজ রোজা, রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি। যেমনটি তারা কলেমা নামাজ রোজা হজ্ব যাকাতের ক্ষেত্রে প্রকাশ করে না।  তেমনি সুদ ঘুষ মদ জুয়া যেনা-ব্যভিচার, খুনখারাবি চাঁদাবাজি দুর্নীতিকে হালাল মনে করে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে না। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ইসলামী সংস্কৃতি কৃষ্টিকালচারকে মেনে চলা ফরজ মনে করে না, কারণ এ দু-বিষয়ে তাদের সঠিক জ্ঞান অর্জন হয়নি।  বিগত তিনশ বছর আগে ইসলাম বিরোধী শক্তি মুসলিম উম্মার ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এই দুটি বিষয়কে  দীন ইসলাম থেকে আলাদা করে ফেলেছে। তাইতো আজ ধর্মভীরু মুসলিমরাও অজ্ঞতার কারণেই এ দুটি বিষয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুত অবস্থান করে। অথচ দ্বীন ইসলামের অন্যান্য ফরজ ওয়াজিব বিষয়গুলোকে তারা নিয়মিত পালন করুক বা না করুক, মেনে চলুক বা না চলুক – অস্বীকার করে না, বিপরীত মেরুতে চিন্তাও করে না। কিন্তু ইসলামী সংস্কৃতি কৃষ্টিকালচার ও ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিষয়ে তারা কেন এত বিপরীতমুখী হয়ে গেল এ উপলব্ধি সঠিকভাবে আমরা করতে পারছি না। যে কারণে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও ভূমিকা পালন করতে পারছি না। ভাবছি আমাদের দাফা ভিত্তিক যে কাজগুলো আছে এ কাজগুলো সঠিক ভাবে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারলেই টু থার্ট মেজরিটি পাওয়া যাবে। সাধারণ জনগণ এমনি এমনি একদিন ইসলামী  সংস্কৃতি কৃষ্টি-কালচার গ্রহণ করে নেবে,ভোটে জিতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। ঠিক যেমন কুপের মধ্যে কুকুর পড়ে মরে গেলে কুপ থেকে হাজার লিটার পানি উঠিয়ে ফেললে কুপের পানি পাক পবিত্র হয়ে যায়। কিন্তু শর্ত হচ্ছে আগে মড়া  কুকুরটিকে কুপ থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে। মড়া কুকুরটি কুপ থেকে না উঠিয়ে ঐ কুপের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হলেও পানি পাক পবিত্র হবে না।

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। দ্বীন ইসলামের মূল স্তম্ভ, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ইসলামী তাহজিব তামাদ্দুনের প্রকৃত শিক্ষা মুসলিম উম্মার শিক্ষানীতি ও পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই দুটি বিষয় সর্বসাধারণ মুসলিমদের নিকট যথা উপযুক্ত ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। পড়াতে হবে, বুঝাতে হবে, জানাতে হবে। এ দুটি বিষয়ে যারা অজ্ঞ, যাদের সঠিক উপলব্ধি নেই, তাদের মাঝে হাজার বছর ধরে আমাদের  দফা ভিত্তিক কাজ করে সফলতা লাভ করা তেমনি কঠিন যেমন কুপ থেকে মড়া কুকুর না উঠিয়ে লক্ষ  কোটি লিটার পানি তুলে কুপ পাক-পবিত্র করার মত। কুপ থেকে মড়া কুকুর না উঠিয়ে শুধু পানি উঠালে কি হবে? পানি উঠানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে, একসময় মড়া কুকুরটি ফুলে পঁচে ক্রমে ক্রমে গলে যাবে, পরে হয়তো মড়া কুকুরের হাড় গোস্ত চামড়া খসে খসে পানির সাথে মিশে বালটিতে উঠে আসতে থাকবে। এভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে একসময় না একসময় কূপের পানি পবিত্র হবে । কিন্তু এই কাজে ঠিক কত মাস কিংবা কত বছর সময় লাগতে পারে, কুপের ভিতর মড়া কুকুর  পঁচে গলে কিরূপ দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে, দুর্গন্ধযুক্ত পানি যেখানে ফেলাবেন সেখানের পরিবেশের কতটুকু ক্ষতি হতে পারে, এ  হিসেব করে দেখা উচিত।

কিন্তু সত্যি বলতে কি আমাদের দেশের গ্রামেগঞ্জে হাটে বাজারে শহরে নগরে সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করলে শুনা– যারা সক্রিয় রাজনীতি করে না রাজনীতি বুঝে না তারাও কিন্তু এক কথায় বলে দেয় আমরা অমুক দলের সমর্থক তমুক দলের ভোটার, আমাদের কাছে আসতে হবে না আমরা এই এই মার্কায় ভোট দেবো।  ভাবতে অবাক লাগে ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে সাধারণ মুসলিমরা অন্য দলের কথা যেভাবে স্বীকার করে, তেমনি বুক ফুলিয়ে  কেউ বলেনা আমরা ইসলামপন্থী, কেউ বলে না আমরা রাজনীতি না করলেও ইসলামপন্থী দলকে ভালোবাসি, কেউ বলে না আমরা ইসলামী দলকেই ভোট দেব। ইসলামপন্থী কিংবা ইসলামী রাজনীতির সংগঠক ও সমর্থক হওয়া মহান সৃষ্টিকর্তার হুকুম এটা যেন আমাদের দেশে সাধারণ মুসলিমরা জানেই না, বুঝেই না।  আমরা যেভাবে দফা ভিত্তিক কাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি সেভাবে তো ওই ৯০% ধর্মভীরু সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা পরিবর্তন করতে পারছি না। তাদের বদ্ধমূল ধারণা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলার অর্থ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা, এ সব জঘন্য অপরাধ, রাজনীতির ময়দানে ধর্মকে টেনে নিয়ে এসে শান্তি ধর্ম ইসলামকে কলঙ্কিত করা। ইসলামী সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচারের কথা বলা গোঁড়ামী, প্রগতি বিরোধী  ছাড়া আর কিছু না। এরা ক্ষমতায় গেলে দোররা মারবে, হাত কাটবে, টিভি সিনেমা হল সবকিছু বন্ধ করে দেবে, মেয়েদেরকে ঘরে বন্দি করে রাখবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এরূপ মৌলিক ধারণায় যারা বিশ্বাসী তারা আমাদের চেয়ে অনেক কৌশলী, অনেক রাজনৈতিক সচেতন। আমাদের দেশের তথাকথিত আলেম ওলামা সহ সর্বসাধারণ মানুষ বাপ দাদা তিন চার পুরুষ থেকে এই শিক্ষা পেয়ে এসেছে। এ রূপ মন-মানসিকতা সম্পূর্ণ সর্বসাধারণের নিকট আমরা আমাদের তিন দফা দাওয়াত নিয়ে হাজির হচ্ছি। চার দফা কর্মসূচির কথা বলতেছি।  দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ আমাদেরকে দাওয়াত ও কর্মসূচিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। ধর্মপ্রাণ মুসলিম,রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি,  সমাজ পরিচালনা করে এমন সব লোকদের সাথে আমরা যতই মেলামেশা করি, উপহার সামগ্রী আদান প্রদান করি, তাঁরা আমাদেরকে ভালো লোক বললেও  আমাদের আদর্শকে গ্রহণ করে নিচ্ছে না। বাকি ২০ শতাংশ  নরম প্রকৃতির গোব্যচারা টাইপের, এরা আমাদের কথা শুনে, বিশ্বাসও করে, কিন্তু ভিতরে মড়া কুকুর থাকার কারণে অগ্রসর হতে পারে না। মাঝে মাঝে সাপোর্ট করে আবার মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা কথাও বলে। এদের মধ্য থেকেই ঘসে মেজে দুই চার পাঁচ জনকে অগ্রসর রূপে পাওয়া যায়। এভাবেই তো  আমাদের দাওয়াত ও কর্মসূচি প্রচারের সময়কাল সেঞ্চুরি করতে চলছে।

সমাজের প্রভাবশালী নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন, মেধাবী, সুপ্রতিষ্ঠিত নাগরিক,ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী, উচ্চপদস্থ আমলা, সেনাবাহিনী পুলিশ বাহিনী সহ অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের উচ্চ পর্যায়ের কারো কাছে অনেক চেষ্টা করেও আমারা ভিড়তে পারছি না। আমরা কেমন, আমাদের দ্বীনদারি, পরহেজগারী, তাকওয়া কেমন– তারা যদি আমাদের সাথে  মেলামেশা না করে তাহলে আমাদের সম্পর্কে তাদের ধারণা পরিবর্তন কিভাবে হবে? আমরা তো আমাদের গন্ডির ভেতরে এক নিয়তে বসে আছি, আমরা একমাত্র সঠিক পথে আছি এটা মনে করে তৃপ্তি পাচ্ছি। আমরা আমাদের চিরাচরিত গন্ডি থেকে বেরুতে পারছি না, আর এই গণ্ডি থেকে বের হতে না পারলে ইসলাম প্রিয় ওই ৯০% মানুষকে সঠিক  ও সম্ভবনাময় পথের দিশা দেখাতেও পারছি না।

আমরা পারছি না গতানুগতিক ধারায় রাজনীতির কার্যক্রম পরিচালনা করতে, পারছিনা সাধারণ মানুষকে ইসলামী তাহজিব তামাদ্দুন, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে । কারণ দেশের জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের দাওয়াতি কাজের লোকবল অতি নগণ্য। সংগঠক, রাজনৈতিক লিডার যারা আছেন তাঁরাও সাধারন দাওয়াত ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন নিয়ে এত ব্যস্ত যে তাঁদের নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ নেই। 

সত্যি বলতে কি আমারা  আমাদের দাওয়াত ও কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি। জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দরজার কড়া নেড়ে নেড়ে তিন দফা দাওয়াত পেশ করছি। কর্মসূচি পালনের ধারা-উপ ধারা রক্ষা করতে গিয়ে ২৪ ঘন্টায় রাত দিনে সংকুলন হচ্ছে না, ২৪ ঘন্টার স্থলে ৩০ ঘন্টায় রাতদিন হলে দায়িত্বশীলদের জন্য অনেক ভালো হতো। তাহলে হয়তো ইসলাম বিরোধী আধিপত্যবাদী শক্তি কর্তৃক বিকৃত মুসলিম উম্মার ইতিহাস সঠিক করণের পদক্ষেপ গ্রহণের সময় হতো। আরো সময় হতো ইসলামী সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচারকে বাস্তবসম্মত আধুনিক উপায়ে আপামর জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন করতে।
আমাদের সময় নাই, সংগতি নাই, দাওয়াত ও কর্মসূচির সাংগঠনিক ধারা উপধারা নিয়ে এত ব্যস্ত যে বালতি বালতি কূপের জল তুলেই যাচ্ছি কিন্তু কূপের ভিতর থেকে মড়া কুকুর বের করার উপায় উপকরণ জোগাড় করতে পারছি না। পিপাসায় কাতর মানুষসহ কত জীব কষ্ট পাচ্ছে, না পারছি তাদেরকে পাক পবিত্র পানি পান করাতে আবার সময়ের অভাবে সংগতির অভাবে কূপের ভিতর থেকে গলিত মড়া কুকুর বের করে নিয়ে আসতেও পারছিনা। শ্যাম রাখি —-না কুল রাখি এ অবস্থায় দিন কেটে যাচ্ছে।

এই প্রকাশনাটি শেয়ার করুন:

Picture of ইবনে শাহ

ইবনে শাহ

ইসলামী চিন্তাবিদ

সম্পর্কিত প্রকাশনাসমূহ

দেশপ্রেমের হাকিকত!!!

দেশ প্রেম নিয়ে আমাদের দেশে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে চলছে। সেই ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে অদ্যবধি পর্যন্ত এদেশের রাজনৈতিক ময়দান গরম করা, দৃষ্টি আকর্ষণ

আরও পড়ুন »

তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?

হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহমাতুল্লাহ আলাইহির মৃত্যুর পরেরদিন থেকে দেশের এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া জগতে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি এবং খবর খুবই ভাইরাল হয়েছে

আরও পড়ুন »

ঈমানী নিশান

সর্বাধিক প্রাক্তন মধ্যে. গ্র্যাভিডা ফ্রিঙ্গিলা লেকটাসে, ভেল কনভালিস ডলোর ট্রিস্টিক নন। খুব ভালো লাগে। ফুসস কনগেইস্ট বা কনগে গ্র্যাভিডা। আলিকুম ইরাত ভলুটপাট। মৌরিস দাপিবাস অ্যালিকুয়েট আগে নেক সাগিটিস। সর্বাধিক

আরও পড়ুন »

অরণ্যে রোদন

আদর্শিক যাত্রার শুরুতেই শিখেছি মূলধন সিন্দুকে আবদ্ধ করে রাখলে কোন লাভ নেই, মূলধন বাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার মাঝেই সার্থকতা। কিন্তু আদর্শিক পথ চলার তিন যুগ পেরিয়ে আজ কেন

আরও পড়ুন »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইবনে ই শাহ ব্লগগুলি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য তথ্যের একটি অত্যাবশ্যক উৎস হয়ে উঠেছে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং আরও অনেক কিছুর রিয়েল-টাইম আপডেট প্রদান করে।